নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে একটি পোশাক কারখানার ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা ডাকাতির ঘটনার মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা হলো- মূল হোতা জলিল (৪০), রিয়াজ (৩৬), সাগর মাহমুদ (৪০), ইসমাইল হোসেন মামুন (৪৫) ও মনোরঞ্জন মণ্ডল বাবু (৪১)। শনিবার রাতে রাজধানী ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা, বিদেশি ডলার এবং অস্ত্র ও গুলিসহ অনেক জিনিস উদ্ধার করা হয়।
রোববার রাজধানীর কাওরানাবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম এসব তথ্য জানান। এর আগে ৭ জুন কালিয়াকৈরের সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস লিমিটেড গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের বেতনের ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা মাইক্রোবাস থেকে লুট করে নিয়ে যায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।
র্যাব জানায়, মাত্র ১০ মিনিটে ফিল্মি স্টাইলের অপারেশনে পোশাক কারখানাটির ৮০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় চক্রটি। তারা ডাকাতির পরিকল্পনা করে প্রথম দুইবার টার্গেট ভেস্তে গেলেও তৃতীয়বারে সফল হয়। এর আগে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের এক সদস্য ওই কারখানাটিতে কর্মীর ছদ্মাবেশে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করে। গ্রেফতাররা সবাই পেশাদার অপরাধী। তাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ১ হাজার ১০০ ইউএস ডলার, ১টি প্রিমিও প্রাইভেটকার, ৩টি মোটরসাইকেল, ১টি বিদেশি রিভলভার, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি ম্যাগজিন, ৩টি পাসপোর্ট এবং ৩৮টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। সবারই বিরুদ্ধে অপরাধ সংশ্লিষ্ট একাধিক মামলা রয়েছে।
সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, প্রায় ৪-৫ মাস আগে চক্রটির মূল হোতা জলিল গার্মেন্টসের টাকা ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এ জন্য ইসমাইল ও মনোরঞ্জন মণ্ডলকে তথ্যসংগ্রহের জন্য কর্মী হিসেবে কারখানাটিতে চাকরির জন্য নিয়োগ দেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক গার্মেন্টসের তথ্য পর্যবেক্ষণ শেষে ইনক্রেডিবল গার্মেন্টসের টাকা লুটের জন্য টার্গেট নির্ধারণ করে। ওই কারখানাটিতে শ্রমিকদের বেতন ক্যাশে দেয় এবং কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় তারা এ টার্গেট ফাইনাল করে।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোরঞ্জন ওই গার্মেন্টসে সাব-কন্টাক্টের কর্মী হিসেবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আসা যাওয়া শুরু করেন। এর আড়ালে তিনি গার্মেন্টসের অন্যান্য কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, পাশর্^বর্তী দোকান ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে কৌশলে তথ্যসংগ্রহ করেন। তার তথ্যেরভিত্তিতেই ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তবে তাদের এপ্রিলের প্রথম ও মে মাসের দ্বিতীয় দফায় দুটি ডাকাতির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কেননা এপ্রিলের বেতন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর মে মাসের বেতনের টাকা পুলিশ স্কটের মাধ্যমে সংগ্রহ করায় সফল হতে পারেনি। পরবর্তীতে ৭ জুন ডাকাতির দিন নির্ধারণ করে এবং সফল হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন সাড়ে ১১টায় মনোরঞ্জন মোবাইলে মূলহোতা জলিলকে টাকা উত্তোলনের জন্য গার্মেন্টসের লোকজন মাইক্রোবাসে ব্যাংকের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে জানায়। তার তথ্যেরভিত্তিতে চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে ফেরার পথে খাড়াজোড়া এলাকায় দুটি মোটরসাইকেল মাইক্রোবাসের সামনে গিয়ে কৌশলে ব্যারিকেড দেয়।
এরপর লোহার হ্যামার দিয়ে মাইক্রোবাসের প্লাস ভেঙে ফেলে এবং অতর্কিতভাবে মাইক্রোবাসের সামনের প্লাসে গুলি ছুড়তে শুরু করে ডাকাতরা। এতে একটি গুলি লেগে মাইক্রোবাসে থাকা গার্মেন্টেসের সহকারী মার্চেন্ডাইজার রাজীব মজুমদার গুরুতর জখম হন। সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মাত্র ৫-১০ মিনিটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ডাকাতরা। এলোপাথাড়ি গুলির কারণে ডাকাত দলের মূল হোতা জলিলের হাতেও গুলি লাগে। মুহূর্তেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে জামগড়া কাশিমপুর রোডে রাখা প্রাইভেটকারের কাছে যায়। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ জলিল এবং লুটকৃত টাকা নিয়ে সাগর ও রিয়াজ ঢাকায় রওনা দেয়।
লে. কর্নেল সারওয়ার বলেন, ডাকাতরা প্রথমে সকলেই সাগরের খিলগাঁওয়ের বাসায় যায়। সেখান থেকে জলিলকে মালিবাগের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে যাওয়ার সময় কাজের ধরন অনুযায়ী ৮ লাখ ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা এবং অস্ত্র বহন ও গুলি এবং প্রাইভেটকার প্রদান করার জন্য আলাদা আলাদাভাবে টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।